মহান আলাহ তা’আলা বলেন- “হে ঈমানদারগণ। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর।” (সূরা ঃ আলে ইমরান ঃ আয়াত ঃ ২০০)
মহান আলাহ তা’আলা আরো বলেন- “আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে। আর তোমাদের জান, মাল ও শস্যের ক্ষতি সাধন করেও পরীক্ষা করব। আর ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা ঃ বাকারা ঃ আয়াত ঃ ১৫৫)
মহান আলাহ তা’আলা আরো বলেন- ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত পুরস্কার পূর্ণভাবে দেয়া হবে। (সূরা ঃ যুমার ঃ আয়াত ঃ ১০)
মহান আলাহ তা’আলা আরো বলেন- যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয় সেটা তার দৃঢ় মনোভাবেরই পরিচায়ক। (সূরা ঃ শু’রা ঃ আয়াত ঃ ৪৩)
মহান আলাহ তা’আলা অন্য এক আয়াতে আরো বলেন- ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর, মহান আলাহ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা ঃ বাকারা ঃ আয়াত ঃ ১৫৩)
মহান আলাহ তা’আলা আরো বলেন- “আমি তোমাদের পরীক্ষা করব। যাতে করে তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে চিনে নিতে পারি।” (সূরা ঃ মুহাম্মদ ঃ আয়াত ঃ ৩১)
১. হযরত আবূ মালিক হারিছ ইবনে আছেম আল আশ’আরী রাদিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। আর আল-হামদুলিলাহ আমল পরিমাপের পালা পরিপূর্ণ করে দেয়। আল-হামদুলিলাহ একত্রে অথবা একাকী আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের সবকিছুকে পরিপূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে নূর ও আলোক এবং সাদকা হচ্ছে ঈমানের প্রমাণ। সবর বা ধৈর্য হচ্ছে আলো এবং কোরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে একটি দলিল। আর প্রত্যেক লোক সকালে উঠে নিজেকে বিক্রি করে দেয়, তারপর যে নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে। (মুসলিম শরীফ)
২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর কাছে সাহায্য চাইল। তিনি তাদেরকে দান করলেন, আবার তারা চাইল। তিনি আবার দান করলেন। এমনকি তার কাছে যা কিছু ছিল তা সবই শেষ হয়ে গেল। তার হাতের সবকিছু দান করার পর তিনি তাদেরকে বললেন- “যা মাল আসে, তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে জমা রাখিনা। যে লোক পবিত্র থাকতে চায় মহান আলাহ তাকে পবিত্র রাখেন। যে লোক কারও মুখাপেক্ষী হতে চায় না, মহান আলাহ তাকে স্ববলম্বী করে দেন। যে লোক ধৈর্যধারণ করতে চায়, মহান আলাহ তা’আলা তাকে ধৈর্য দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন কিছু কাউকে দেয়া হয়নি।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৩. হযরত আবূ ইয়াহইয়া ছুহায়েব ইবনে সিনান রাদিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন- মুমিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই কল্যাণকর। মু’মিন ব্যতীত অন্যের ব্যাপারে এরূপ নয়। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে সে মহান আলাহর শোকর করে। তাতে তার মঙ্গল হয়। আবার ক্ষতিকর কোন কিছু হলে সে ধৈর্যধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম শরীফ)
৪. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম একজন মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, মহান আলাহকে ভয় কর এবং সবর কর। মহিলাটি বলল, আপনি আমাকে কিছু না বলে আপনি নিজের কাজ করুন। কারণ আপনি আমার মত মুসিবতে পড়েন নি। মহিলা আসলে তাকে চিনতে পারেনি। তখন তাকে বলা হল, ইনি হচ্ছেন রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম। মহিলাটি রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর বাড়ীর দরজার সামনে এল এবং সেখানে কোন দারোয়ান দেখতে পেল না। সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেন, “সবর তো প্রথম আঘাতের সময়ই হয়ে থাকে।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৫. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন- মহান আলাহ পাক বলেন- আমার মু’নিন বান্দার জন্য আমার কাছে বেহেশত ব্যতীত আর কোন পুরস্কার নেই। যখন আমি দুনিয়া হতে তার প্রিয়জনকে নিয়ে যায় আর এ সময় সে সবর করে। (বোখারী শরীফ)
৬. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালামকে বলতে শুনেছি মহান আলাহ বলেছেন- “আমি যখন আমার বান্দাকে তার দু’টি প্রিয় বস্তুর মাধ্যকে পরীক্ষা করি আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, তখন আমি তাকে তার বদলে বেহেশত দান করি।” (বোখারী শরীফ)
৭. হযরত আত্বা ইবনে আবূ রিবাহ রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমাকে ইবনে আব্বাস রাদিয়ালাহু আনহু বলেছেন, তোমাকে আমি একজন বেহেশতী মহিলা দেখিয়ে দিব নাকি? আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি বললেন, এই কাল মহিলাটি রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর কাছে এসে বলল, আমি মৃগি রোগে ভুগছি এবং তাতে আমার শরীর উলঙ্গ হয়ে যায়। আপনি আমার জন্য দু’আ করুন। তিনি বললেন, যদি তুমি চাও সবর করতে পার তাতে তুমি বেহেশতবাসী হবে। আর যদি চাও তো আমি তোমার আরোগ্যের জন্য দু’আ করে দেই। সে বলল, আমি সবর করব। কিন্তু আমার শরীর যে উলঙ্গ হয়ে যায়? সেজন্য মহান আলাহর কাছে দু’আ করুন। যাতে উলঙ্গ না হই। তিনি তার জন্য দু’আ করলেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৮. হযরত আবী আবদুর রহমান আবদুলাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর দিকে দেখছিলাম। তিনি নবীগণের মধ্য হতে কোন এক নবীর কাহিনী বর্ণনা করছিলেন। যে তার জাতি তাকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। তার তিনি নিজের চেহারা হতে রক্ত মুছে ফেলেছিলেন এবং বলছিলেন- “হে মহান আলাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও। কারণ তারা জানে না।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
৯. হযরত আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন, মুসলিম বান্দার যে কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা হোক না কেন। এমনি কি কোন কাটা ফুটলেও তার কারণে মহান আলাহ তার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১০. হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি তাকে বললাম, ইয়া রাসুলুলাহ! আপনি তো ভীষণ জ্বরে ভুগছেন। তিনি বললেন- হ্যাঁ! তোমাদের মত দু’জনের সমান জ্বরে ভুগছি। আমি বললাম, কারণ আপনার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব এই জন্য কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ! ঠিক তাই। যে কোন কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা তা কাঁটা কিংবা অন্য কোন বেশি কষ্টদায়ক হোক না কেন মুসলিম বান্দা কষ্ট পেলে মহান আলাহ অবশ্যই সে কারণে তার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। আর তার ছোট গুনাহ্গুলো গাছের পাতার মত ঝরে পড়ে যায়। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১১. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেছেন-“তোমাদের মধ্যে কারো কোন বিপদ বা কষ্ট হলে সে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কেহ এরূপ করতেই চায় তবে যেন বলে, হে মহান আলাহ তুমি আমাকে জীবিত রাখ। যত সময় পর্যন্ত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর। আর যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর তখন আমাকে মৃত্যু দান কর।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১২.হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন ঃ “মহান আলাহ তা’আলা যে লোকের কল্যাণ চান তাকে মহান আলাহ বিপদে ফেলেন।” (বোখারী শরীফ)
১৩. হযরত আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন- মহান আলাহ যখন তার কোন বান্দার প্রতি মঙ্গলের ইচ্ছা করেন। তখন দুনিয়াতে তার জন্য তাড়াতাড়ি বিপদ-আপদ নাযিল করে দেন। আর তিনি যখন তার বান্দার প্রতি অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন। তখন তাকে গোনাহের মধ্যে ছেড়ে দেন। অবশেষে কিয়ামতের দিবসে তাকে ধরবেন। রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম আরও বলেছেন- কষ্ট বেশি হলে সাওয়াবও বেশি হয় এবং মহান আলাহ যখন কোন জাতিকে ভালবাসেন, তখন তাকে পরীক্ষায় সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তার জন্য রয়েছে মহান আলাহর সন্তুষ্টি। আর যে লোক অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য রয়েছে মহান আলাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিযী শরীফ)
১৪. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন- যে লোক অন্যকে ধরে আছাড় দেয়, সে শক্তিশালী নয়, বরং শক্তিশালী হচ্ছে সেই লোক, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১৫. হযরত মু’আয ইবনে আনাস রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন- যে লোক নিজের ক্রোধ প্রদর্শনের ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও তা দমিয়ে রাখে তাকে মহান আলাহ কিয়ামতের দিন সব মানুষের ওপর মর্যাদা দিয়ে ডাকবেন। এমনকি তার জন্য বড় বড় চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী মেয়েদের মধ্য হতে বেছে নেবার স্বাধীনতা দিবেন। (আবু দাউদ ও তিরমিযী শরীফ)
১৬. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক লোক রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালামকে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, রাগ করো না। সে লোক বারবার উক্ত কথা বলতে লাগল। আর রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলতে লাগলেন, রাগ করো না। (বোখারী শরীফ)
১৭. হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন- মু’মিন নর-নারীর জীবনে জান-মাল ও সন্তানের উপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকে। অবশেষে মহান আলাহর সঙ্গে সে দেখা করে এমন অবস্থায় যে, তার আর কোন গোনাহ অবশিষ্ট থাকে না। (তিরমিযী শরীফ)
১৮. হযরত আবূ ইয়াহইয়া উসাইদ ইবনে হুদাইর রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- এক আনসারী লোক বলল, ইয়া রসুলুলাহ! আপনি কি আমাকে কর্মচারী নিযুক্ত করবেন? যেমন অমুককে করেছেন? রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন, তোমারা অনতিবিলম্বে আমার পরে তোমাদের নিজেদের উপর অন্যের গুরুত্ব দেখতে পাবে। তখন আমার সঙ্গে হাউযে কাউসারে দেখা না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সবর করবে। (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
১৯. হযরত আবদুলাহ ইবনে আবূ আউফা রাদিয়ালাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন রসুলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়া সালাম শত্র“দের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং সূর্য হেলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। এমন অবস্থায় তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, যে লোকজন! তোমারা দুশমনের সঙ্গে সংঘর্য কামনা করো না। মহান আলাহর কাছে শান্তি চাও। তবে যখন তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে পড়ে তখন সবর করবে। অর্থাৎ অটল থাকবে। জেনে রাখ- বেহেশত রয়েছে তলোয়ারের ছায়াতলে। তার পর রসুলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন- “হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ চালনাকারী ও শত্র“ বাহিনীকে পরাজয় দানকারী মহান আলাহ! তাদেরকে পরাস্ত কর এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয়ী কর।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)
Leave a Reply